সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে জানুন

 

পটভূমি

দেশের জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সমাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিবেচনায় নিয়ে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩” পাশ করা হয়েছে এবং গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের পর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

উক্ত আইনের আলোকে গঠিত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বৈশিস্ট্য

  • জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরিয়া ১৮ (আঠারো) বৎসর তদূর্ধ্ব বয়স হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর বয়সি সকল বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রণ করিতে পারিবে;
  • তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর উর্ধ্ব বয়সের নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হইবেন;
  • বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণ এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হইতে পারিবেন;
  • প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকিবে;
  • পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ (পচাঁত্তর) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করিলে পেনশনারের নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বৎসর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্ত হইবেন;
  • চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান করিবার পূর্বে মৃত্যুবরণ করিলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তাহার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হইবে; এবং
  • পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করিয়া কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হইবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকিবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা

  • সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। তবে, বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ নাগরিকগণও ১০ বছর নিরবচ্ছিন্ন চাঁদা প্রদান করলে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন;
  • প্রবাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রেরিত চাঁদার ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যাবে। এ প্রণোদনার অর্থ তার চাঁদা হিসেবে জমা হবে;
  • ব্যাংকে সরাসরি গিয়ে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে এবং ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে চাঁদার টাকা জমা দেওয়া যাবে;
  • প্রবাসী স্কিমে অংশগ্রহণকারীগণ ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা জমা দিবেন;
  • চাঁদার টাকা ট্রেজারি বন্ডসহ নিরাপদ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা হবে;
  • সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর রেয়াত পাওয়া যাবে;
  • আবেদনের সময় চাঁদাদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক;
  • মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থও আয়কর মুক্ত থাকবে;
  • নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি প্রদান করা হবে;
  • মোবাইল নম্বর ও প্রবাসীদের ইমেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ অবহিত করা হবে;
  • সোনালী ব্যাংকের প্রতিটি শাখা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সম্মুখ অফিস হিসেবে কাজ করবে;
  • পেনশনের টাকা তোলার জন্য কোনো অফিসে যেতে হবে না। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে;
  • পেনশন স্কিম ও চাঁদার হার যেকোনো সময় পরিবর্তন করা যাবে। তবে, পেনশনার আইডি অপরিবর্তিত থাকবে;

প্রগতি স্কিম

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য এ সুবিধা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অথবা নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে যুক্ত হওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্ষিথে যোগ দিলে ক্ষিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মী এবং বাকি অংশ প্রতিষ্ঠান দিবে। মাসিক চাঁদার হার ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকা।

সমতা স্কিম

দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাদের আয়সীমা বাৎসরিক অনুর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের নাগরিক- গণের জন্য এ স্কিম। সমতা স্কিমে মাসিক চাঁদার হার ১০০০ টাকা। যার মধ্যে চাঁদাদাতা জমা দিবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দিবে সরকার।

প্রবাস স্কিম

  • বিদেশে অর্জিত অর্থ থেকে নিরাপদ সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রবাস স্কিমে চাঁদা প্রদান করলে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে;
  • প্রবাস স্কিমে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা প্রদানে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। এ প্রণোদনার অর্থ তার চাঁদা হিসাবে জমা হবে;
  • প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী কর্মী ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত এ্যাকাউন্টে চাঁদার অর্থ জমা দিতে পারবেন;
  • পেনশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চাঁদাদাতাকে কোন অফিসে আবেদন করতে হবে না । নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান করলে ৬০ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে EFT (Electronic Fund Transfer) এর মাধ্যমে তার ব্যাংক একাউন্টে মাসিক পেনশনের টাকা জমা হবে;
  • প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসলে অন্য স্কিমে (প্রগতি, সুরক্ষা) চাঁদাদাতা হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন;
  • প্রবাস স্কিমে অংশগ্রহণকারী চাঁদাদাতা ০৩ মাস, ০৯ মাস ও ১২ মাসের চাঁদা একসাথে জমা প্রদান করতে পারবেন;
  • প্রবাস আয় থেকে দেশে প্রেরিত অর্থের বৃহৎ অংশ সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় হয়। প্রবাস পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করলে প্রবাসী কর্মী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে যখন কর্মহীন হবে তখন এ অর্থ ব্যয় করতে পারবে;
  • প্রবাসী কর্মী নিজ নামে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন করে এ স্কিমে অংশগ্রহণ করবে, তাই এ কার্যক্রমে ৩য় কোন ব্যক্তির হস্তক্ষেপ থাকবে না;
  • যেহেতু সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নমিনী রাখার সুযোগ রয়েছে তাই কোন কারনে প্রবাসী চাঁদাদাতা মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত সকল অর্থ মুনাফাসহ নমিনীকে ফেরত প্রদান করা হবে।

সুরক্ষা স্কিম

স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এ স্কিম। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, গৃহিণী, তাঁতিসহ সব অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করে এ জিমে যুক্ত হতে পারবেন। মাসিক চাঁদার হার ১০০০, ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকা।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম

টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো- উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সকল নাগরিককে সম্পৃক্ত করা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বৈষম্যহীন সামাজিক কাঠামোয় সকল নাগরিকের বিশেষ করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ ও ১৫ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ২০০৮ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করাসহ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ প্রণীত হয় যার অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমূখী পদক্ষেপ, যা সকল নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের আওতায় ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো বিনির্মান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৭২.৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ জনমিতিক লভ্যাংশ (Demographic Dividend) এর সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬২% কর্মক্ষম। ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭% যারা মূলতঃ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির উপর নির্ভরশীল। ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২৫% এ উন্নীত হবে। একই সাথে গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিধায় একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। ১৮ বছরের অধিক বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব হলে তারা একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন। সেলক্ষ্যে দেশের ১০ কোটি নাগরিককে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে আমাদের বয়স্ক জনসাধারণের সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।

সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে এর কার্যক্রম শুরু করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের সাথে সংগতি রেখে সম্পূর্ণ আইটি প্লাটফর্মে সর্বজনীন পেনশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটির উন্নয়ন করা হয়েছে। যে কোন ব্যক্তি www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে সহজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন এবং অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এর মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সাবস্ক্রাইবারকে upension সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইউনিক পেনশন আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে লগইন করে একজন সাবস্ক্রাইবার তার পেনশন (কর্পাস) হিসাবে জমার পরিমাণ, প্রাপ্ত লভ্যাংশ ইত্যাদি সরাসরি দেখতে পারেন। আইটি জ্ঞান সীমিত বা আইটি এক্সেস নেই এমন কোন ব্যক্তিও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইন্টারনেট ক্যাফে কিংবা অন্য কারও সহায়তায় নিবন্ধন সম্পাদন করতে পারেন। যদি কারো অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা না থাকে তবে সে সোনালী বা অগ্রণী ব্যাংকের যে কোন ব্রাঞ্চের কাউন্টারে গিয়ে সহজেই টাকা জমা প্রদান করতে পারেন। ভবিষ্যতে ব্যাংকের আওতা বাড়িয়ে এ সেবা আরো সহজতর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৬,৬০০ জন নিবন্ধন করেছেন, যার বিপরীতে ১৯ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশনের বৈশিষ্টসমূহ:

  • সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
  • পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
  • চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।
  • চাঁদাদাতা তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবে।
  • পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
  • নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।
  • আপাততঃ সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশনের আওতা বহির্ভূত হবেন। তবে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এ ব্যবস্থার অধীনে আনয়ন করা হবে।
  • সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
  • পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

সর্বজনীন পেনশনের স্কিমসমূহ: (ক) প্রবাস, (খ) প্রগতি, (গ) সুরক্ষা এবং (ঘ) সমতা।

(ক) প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য): বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশীগণ দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রী) নামেও পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) চালু করতে এবং মাসিক জমা পরিশোধ করতে পারবেন।

(খ) প্রগতি (ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য): ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি/কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে তাদের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। এক্ষেত্রে upension সিস্টেমে সহজেই কোম্পানীর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অতঃপর উক্ত কোম্পানীয় কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ নিবন্ধন করবেন। কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৩০০০/-, ৫০০০/- এবং ১০০০০/- টাকা।

(গ) সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/-, ২০০০/-, ৩০০০/- এবং ৫০০০/- টাকা।

(ঘ) সমতা (স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকগণের জন্য): বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ [যাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ (ষাট) হাজার টাকা, তবে বার্ষিক আয়ের সমর্থনে কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন নেই] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/- টাকা, যার ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা প্রদান করবেন এবং অবশিষ্ট ৫০০ টাকা সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করবে।

একটি উন্নত রাষ্ট্রকে কেবল জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি, জিডিপি’র আকার ও জনগণের মাথাপিছু আয় দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। নাগরিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তাও উন্নত রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সর্বজনীন পেনশনের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নাগরিকদের বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ একটি অধিকতর কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, যা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের সমার্থক।